• শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৯ অপরাহ্ন
  • English Version

ভূমিসপ্তাহ সেবা শুরু ২২মে সোমবার ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক / ৩৩ ফেসবুক শেয়ার
আপডেট সময় : রবিবার, ২১ মে, ২০২৩

‘স্মার্ট ভূমি সেবায় ভূমি মন্ত্রণালয়’ প্রতিপাদ্যকের সামনে রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামী সোমবার, ২২ মে থেকে রবিবার, ২৮ মে ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে ‘ভূমি সেবা সপ্তাহ-২০২৩’ উদ্‌যাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনকৃত স্মার্ট ভূমিসেবার মূল অংশীজন হিসেবে দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করা, স্মার্ট ভূমিসেবা বিষয়ে সবাইকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবগত করা এবং ভূমি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজ নাগরিক অধিকারের ব্যাপারের সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এবারের ভূমি সেবা সপ্তাহের মূল লক্ষ্য। এছাড়াও, ভূমিসেবা সপ্তাহকালীন বিশেষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশকিছু ভূমিসেবা প্রদান করা হবে।

এই বছর ভূমিসেবা সপ্তাহটি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত স্মার্ট ভূমিসেবা উদ্যোগ এবং জাতীয় ভূমি সম্মেলন ২০২৩-এর ধারাবাহিকতায় উদ্‌যাপন করা হবে। এজন্য এবারের ভূমিসেবা সপ্তাহটি কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্বোধন করা হচ্ছেনা। স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থাপনে প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রী ‘রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ’, ‘স্মার্ট ভূমি নকশা’, ‘স্মার্ট ভূমি রেকর্ড’ এবং ‘স্মার্ট ভূমি-পিডিয়া’ উদ্বোধন করেছিলেন গত ২৯ মার্চ, ২০২৩।

আগামী ২২মে সারা দেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৩ উদ্বোধন করবেন।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে এই মাসের শুরুতে ভূমি সচিব মোঃ খলিলুর রহমান-এর সভাপতিত্বে ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন সংক্রান্ত এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে যথাযথ অনুমোদন প্রাপ্তির পর সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সারা দেশে ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ পালনের নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন চার ধরণের ভূমিসেবা বিদেশে থেকেই গ্রহণ করছেন। পর্যায়ক্রমে প্রবাসীদের আরও কিছু ভূমিসেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এজন্য, এই প্রথমবারের মত স্বল্পপরিসরে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও স্মার্ট ভূমিসেবা বিষয়ে অবহিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

(২। স্মার্ট ভূমিসেবার স্বরূপ) উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ প্রতিষ্ঠা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপে ৪টি পিলার যথাক্রমে: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট গভর্নেন্স অন্তর্ভুক্ত করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত চারটি স্মার্ট ভূমিসেবা (‘রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ’, ‘স্মার্ট ভূমি নকশা’, ‘স্মার্ট ভূমি রেকর্ড’ এবং ‘স্মার্ট ভূমি-পিডিয়া’) ছাড়াও বেশকিছু ভূমিসেবা ব্যবস্থা ‘স্মার্ট ডিজিটালাইজ’ করা হচ্ছে। এছাড়া, ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজকৃত ভূমিসেবা সমূহও স্মার্ট করে তথা অধিকতর ব্যবহারকারী সহায়ক ও সহজ করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখ করার যেতে পারে ই-নামজারির দ্বিতীয় ভার্সন স্থাপনের কাজ এবং বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভেতে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার।

সম্পদের দক্ষ ব্যবহার করে তথ্য চালিত উন্নত নাগরিকসেবা প্রদান এবং নাগরিক সেবা গ্রহণের অভিজ্ঞতা অধিকতর সহজ করার উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, ক্লাউড কম্পিউটিং, ড্রোন এবং ইউএভি, রিমোট সেন্সিং, মেশিন ভিশন, বায়োমেট্রিক্স ইত্যাদি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম ডিজাইনে। এর ইউজার ইন্টারফেস হচ্ছে ‘স্মার্ট ভূমিসেবা প্ল্যাটফর্ম’ (https://land.gov.bd) ওয়েব পোর্টাল এবং সংশ্লিষ্ট মোবাইল অ্যাপ।

প্রসঙ্গত, ভূমি সেবাকে সাধারণ মানুষের নিকট আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে বেশকিছু সেবা ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজেশন করেছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ই-নামজারি, অনলাইন/ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন কর, ১৬১২২ কলসেন্টার, সোশ্যাল মিডিয়া (www.facebook.com/land.gov.bd) ও কিয়স্কের মাধ্যমে ভূমিসেবা, ডিজিটাল জরিপ, অনলাইনে জলমহালের আবেদন, ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক, মর্টগেজ ডাটা ব্যাংক। এসব নানাবিধ উদ্যোগের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

সারা দেশে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থা চালু হলে হলে নাগরিকগণকে খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না, একবার কোথাও ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হলে, সেখানে ভবিষ্যতে আর জরিপ করার প্রয়োজন পড়বে না। ভূমি নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা ও সীমানা বিরোধ কমে যাবে বহুলাংশে।

উল্লেখ্য, ই-নামজারি উদ্যোগের জন্য ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০-এ ভূষিত হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন করের জন্য অর্জন করেছে উইসিস পুরস্কার ২০২২ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২২। ভূমি তথ্য ব্যাংকের জন্য অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ২০২২।

(৩। ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে ভূমি অফিসে বিশেষ সেবা) ‘স্মার্ট ভূমি সেবায় ভূমি মন্ত্রণালয়’ প্রতিপাদ্যে দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৫০৭টি উপজেলা, রাজস্ব সার্কেল, ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসে ২২ মে থেকে ২৮ মে ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ভূমি সেবা সপ্তাহ ২০২৩-এর কার্যক্রম চলবে।

ভূমিসেবা সপ্তাহে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে, স্থানীয় সম্মেলন কক্ষে কিংবা সুবিধাজনক স্থানে ক্যাম্প করে সেবা বুথ স্থাপন করা হবে। সেবাবুথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রযোজ্য ভূমি সেবা দেওয়া হবে, ভূমিসেবা বিষয়ে অবহিত করা হবে এবং পরামর্শ সেবা দেওয়া হবে।

ই-নামজারি, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর, ডাকযোগে সার্টিফাইড খতিয়ান ও ম্যাপ এবং ১৬১২২ নম্বরে কল সেন্টারের মাধ্যমে ভূমিসেবা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত ‘রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ’, ‘স্মার্ট ভূমি নকশা’, ‘স্মার্ট ভূমি রেকর্ড’ এবং ‘স্মার্ট ভূমি-পিডিয়া’ সহ স্মার্ট ভূমিসেবা স্থাপনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার ব্যাপারে সম্যক ধারণা প্রদান করা হবে ভূমিসেবা সপ্তাহে।

(৪। মাঠ পর্যায়ে দপ্তর কেন্দ্রিক বিশেষ নির্দেশনা) ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি সেবা সপ্তাহ ২০২৩ উদ্‌যাপনে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কেন্দ্রিক কিছু বিষয়ে গুরুত্বারোপ করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় পর্যায়ে যেসব ভূমি সেবা প্রদানে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত কার্যক্রম/কর্মসূচি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে। এছাড়া, সুবিধাজনক স্থানে গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সমাজকর্মী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণ, সেবা গ্রহীতা তথা সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক সভা আয়োজন করা হবে। বিভাগীয় কমিশনার দপ্তর থেকে পুরো বিভাগে সুষ্ঠুভাবে ভূমি সেবা সপ্তাহ পালনের ব্যাপারটি তদারকি করা হবে।

জেলা পর্যায়ে যেসব ভূমি সেবা প্রদানে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: ই-নামজারির আবেদন গ্রহণ, নিষ্পত্তিকৃত এলএ কেইসের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান, অনলাইনে খতিয়ানের  সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ, অনলাইনে মৌজা ম্যাপ ডাক বিভাগের মাধ্যমে সরবরাহ করা এবং, মাঠ পর্যায়ে চলমান জরিপ কার্যক্রম বিষয়ে গণশুনানি, আপত্তি/আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ। এছাড়া মাঠ পর্চা, রেকর্ড  হস্তান্তরসহ সকল সেবা জনগণকে দেওয়া হবে। সেবা গ্রহীতাদের ভূমি সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথে কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। জেলা পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক নাগরিক সভা আয়োজন করা হবে।

উপজেলা পর্যায়ে যেসব ভূমি সেবা প্রদানে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: ই-নামজারির আবেদন গ্রহণ, ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্তকৃত কৃষি খাস জমির কবুলিয়ত ও দলিল হস্তান্তর, অনলাইনে ডিসিআর ও খতিয়ান ইত্যাদি সেবাসমূহ প্রদানের ব্যবস্থা করা, মাঠ পর্যায়ে চলমান জরিপ কার্যক্রম বিষয়ে গণশুনানি, আপত্তি/আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা, মাঠ পর্চা, রেকর্ড  হস্তান্তরসহ বিবিধ সেবা দেওয়া। এছাড়া ই-নামজারি, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন, খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ বিষয়ে ব্যাপক অবহিতকরণ ও গণসচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সেবা গ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথে কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।

এছাড়া যে ১৭টি উপজেলা/এলাকায় বর্তমানে দলিলমূলে নামজারি করার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ই-মিউটেশন-ই-রেজিস্ট্রেশন আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ১৭টি উপজেলা/এলাকা হচ্ছে: ১। উত্তরা, ঢাকা ২। খিলগাঁও, ঢাকা ৩। গুলশান, ঢাকা ৪। সাভার, ঢাকা ৫। আনোয়ারা, চট্টগ্রাম ৬। পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম ৭। রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ৮। টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ৯। কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০। কুমারখালী, কুষ্টিয়া ১১। বাসাইল, টাংগাইল ১২। নাগরপুর, টাঙ্গাইল ১৩। চারঘাট, রাজশাহী ১৪। তাজপুর, সিলেট ১৫। চিরিরবন্দর, দিনাজপুর ১৬। নান্দাইল, ময়মনসিংহ ১৭। হিজলা, বরিশাল।

ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব ভূমি সেবা প্রদানে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে: ই-নামজারি এবং অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর বিশেষত ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান বিষয়ে অবহিতকরণ ও প্রচার। ভূমি সেবা গ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবাবুথে কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।

 

আওয়াজ ডটকম ডটবিডি, ২১ মে ২০২৩


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর